বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিআইডির বিশেষ ‍পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘সিআইডি এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেলে মামলা করা হবে।’

সিআইডির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের মাধ্যমে জনসাধারণ ও সরকারি সম্পত্তি দখল করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ‘বসুন্ধরা রিভারভিউ’-এর ক্ষেত্রেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের থেকে প্লট বিক্রয়ের মাধ্যমে অগ্রিম এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সব জমির আনুমানিক দাম দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। জমিগুলো নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।

সূত্র থেকে আরও জানা যায়, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিঘাপ্রতি ২০-২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি, কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করেন সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বসুন্ধরা ওয়েল ও গ্যাস নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রেড বেসড মানিলন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ হতে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানি করে। পরে উক্ত আমদানি করা বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছামতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে মনোপলি বিজনেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। উক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়ই স্বর্ণের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি, শূল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।