নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বছরের ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে লিপসন লাল বাহিনী। মিরপুর উপজেলা এলাকায় পুনরায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে এই বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে জনমনে নানান প্রশ্ন।
গত ৩১-৩-২৫ ইং তারিখে সশস্ত্র মহড়াকালে লিপসন লাল বাহিনীর ৫ সক্রিয় সদস্য মিরপুর থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও দুইটি মটর সাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনার ভিডিও ধারণের পর ফেসবুকে পোস্ট করা হলে ঘন্টায় মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হতে থাকে ভিডিওটি। আটককৃতরা হলেন- ১। মোঃ হাবিবুর রহমান(৩৩), পিতা-মোঃ হাফিজুর রহমান, সাং-চক, ২। মোঃ জসিম উদ্দিন(৩৮), পিতা-মৃত আব্দুর রহমান গেদু, সাং-চক, ৩। মোঃ লিটন (৩৫), পিতা-মোঃ বাবর আলী, সাং-কুর্শা, ৪। মোঃ বাচ্চু (৩৭), পিতা-মৃত মকবুল হোসেন, সাং-কুর্শা এবং ৫। মোঃ সাজেদুল ইসলাম(২৩), পিতা-মৃত সামছু, সাং-কুর্শা, সর্ব থানা-মিরপুর, জেলা-কুষ্টিয়া। গ্রেফতার পূর্বক উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হাবিবুর রহমান ইতিপূর্বে পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের ৯ জুলাই মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামে লিপসন লাল বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন শওকত আলী(৫৫) নামের এক ব্যাক্তি। সেসময় শওকতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে বাহিনীর সদস্যদের হামলায় গুরুতর আহত হন নিহতের ভাই, ভাতিজা সহ ৫ জন। ঐ মামলার ৩ নং আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান। এই মামলায় কারাগারে ছিলেন তিনি। এছাড়া উক্ত মামলায় তদন্তে হাবিবুর দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্য হাবিবুর লিপসন লাল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানার কর্মরত থাকাকালীন হত্যাকান্ডের দিন দুপুরে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন তিনি। একই মামলার ২ নং আসামি ওয়াকিবুল ইসলাম লিপসন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা উপজেলা তাঁতীলীগের আহ্বায়ক ও লিপসন লাল বাহিনীর প্রধান। আহ্বায়ক পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন লিপসন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। লিপসন তার আপন চাচাতো ভাই পুলিশ সদস্য হাবিবুরকে বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পুলিশ সদস্য হওয়ার সুবাদে হাবিবুর অনাহাসে সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত হতেন এবং মাদকের বড় বড় চালান নিজেই নিয়ে এসে বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দিতেন। লিপসন লাল বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। লিপসন ইতিপূর্বে কুষ্টিয়ায় কর্মরত এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে তার প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পরবর্তীতে ঐ নারী কনস্টেবল লিপসনের নামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। লিপসন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমঝোতা করেন এবং ঐ নারী কনস্টেবলকে বগুড়া জেলায় বদলি করে দেন। এই লিপসনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার পাশাপাশি তাকে ঢাকার সাভারে নিয়ে গিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এই লিপসন লাল বাহিনীর প্রধান লিপসনসহ তার সহযোগীরা গাঁ ঢাকা দেন। বেশ কয়েকমাস যাবৎ তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড একেবারেই স্থবির হয়ে পড়ে। পুনরায় নিজেদের সক্রিয় অবস্থান জানান দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের হারানো আধিপত্য ফিরিয়ে আনতে অস্ত্রের মহড়া শুরু করেছেন। এতে করে পুনরায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীদের ভাষ্য মতে, তারা আর সন্ত্রাসীমুলক কর্মকাণ্ড বা বাহিনীর আধিপত্য দেখতে চান না। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে লিপসন সহ যে সকল সন্ত্রাসীরা বাহিনী তৈরি করে জনগণের উপর বুলডোজার চালিয়েছে তাদের সকলের বিচার হওয়া উচিত। তারা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যে সকল সন্ত্রাসীরা পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টায় রয়েছে তাদের আটক করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন। যাতে করে পুনরায় কোন সন্ত্রাসী বাহিনীর জন্ম এই নতুন বাংলাদেশে না হয়।
প্রসঙ্গে কথা বলতে লিপসন লাল বাহিনীর প্রধান ওয়াকিবুল ইসলাম লিপসনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন তিনি। পর্দার আড়ালে থেকে পুনরায় বাহিনীকে সক্রিয় করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসির) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।