মামলা দায়েরের পর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ ইউনুস সরকার নামে ঐ ভুষি মালের দোকানদারকে আটক করে। এবং তার দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মাজিলা গ্রামের সোবহান ও ইসহাক নামে ২ আসামীকে আটক করে। তবে সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই হত্যার কোন নিশ্চিত সূত্র পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, নিহত টুটুল প্রায় ৩০ বছর পর প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর দুটি কারণে সমস্যায় ভূগছিলেন। আটককৃত ইউনুস সরকারের সাথে পার্টনারশিপে ব্যাবসা নিয়ে ঝামেলা চলছিলো। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ব্যাবসায়ীক ভাবে সমস্যায় ছিলেন। ইউনুস সরকারের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছিলেন টুটুল। কিন্তু ইউনুস সরকার টুটুলকে তার টাকার হিসাব না বুঝিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও কালক্ষেপণ করে আসছিলো। টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে টুটুলের সাথে ইউনুস সরকারের ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার ঝামেলাও হয়েছে। এমনকি টুটুলকে লক্ষ্য করে গুলি করার সময় সন্ত্রাসীরা উচ্চারণ করে “সরকার মাথা ঘোরাও”। অর্থাৎ হত্যাকারীরা পূর্ব থেকেই ইউনুস সরকারের পরিচিত। তাই স্থানীয় অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেছেন, ইউনুস সরকারের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্কে ভাঙনের জের ধরেই এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টুটুলের এক আত্মীয় জানান, টুটুল বিদেশে থাকা অবস্থায় টুটুলের স্ত্রীর একাধিক লোকের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো বলে গুঞ্জন আছে। টুটুল দেশে ফেরার পর এই ঘটনা সেও জেনে যায়। এবং ব্যাপক পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ আত্মীয় আরও জানান, টুটুলের স্ত্রীর কারণেই টুটুলের মেয়ে টুম্পার সংসারে ভাঙন ধরে। পরে টুম্পার এক ছেলে সহ টুম্পার সাথে আগের স্বামীর ডিভোর্স হয়ে যায়। বিস্তারিত অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, টুটুলের স্ত্রী কামরুন্নাহারের সাথে তাদের এক আত্মীয়ের অবৈধ সম্পর্কের জেরে বেশ কিছুদিন আগেও টুটুলের আরেক আত্মীয়ের ঝামেলা হয় এবং তা থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।
টুটুল হত্যাকান্ডে নিহত টুটুলের পরিবার কাকে সন্দেহ করছে জানতে চেয়ে হত্যা মামলার বাদী ও নিহত টুটুলের ছেলে শাহরিয়ার খান তানভীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে তার মেয়ে টুম্পা খান প্রতিবেদককে জানান, “আমার বাবার হত্যায় আমরা কাকে সন্দেহ করছি, অথবা কেন সন্দেহ করছি, তা পুলিশকে জানিয়েছি। তাছাড়া বিষয়টা নিয়ে সব কথা সবার সাথে এই মুহূর্তে শেয়ার করতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করছে, কে বা কারা এই হত্যার সাথে জড়িত, তা অচিরেই প্রশাসন খুঁজে বের করবে। এই মুহূর্তে আমরা মানসিকভাবে খুব বাজে অবস্থায় আছি, কোন অপরিচিত নম্বরের ফোন ধরছি না। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব না”
হত্যার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে কুষ্টিয়ার ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- “হত্যার পর সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যেই ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, খুব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে”।
স্থানীয়রা মনে করছেন, পরকীয়া অথবা ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব উভয়ের যেকোন একটি কারণেই হয়তো টুটুলকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর ক্ষত না শুকাতেই টুটুলের পরিবার টুটুলের কুলখানির আয়োজন করেছে। তাদের অনেকের দাবি, ইউনুস সরকার এবং টুটুলের স্ত্রী কামরুন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই টুটুল হত্যার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।